সূরা মাউন – বাংলা অর্থসহ উচ্চারণ । ফজিলত ও শিক্ষা
সূরা মাউন বাংলা উচ্চারণ ও সূরা মাউন এর বাংলা অর্থ এখানে সহজভাবে দেওয়া হয়েছে। এই সুন্দর সূরার শিক্ষাগুলো জানতে এবং আয়াত-by-আয়াত অনুবাদ পেতে এখনই পড়ুন।
সূরা মাউন বাংলা উচ্চারণ ও সূরা মাউন এর বাংলা অর্থ জানলে এই সূরার গভীর শিক্ষা ও বার্তা আরও ভালোভাবে হৃদয় দিয়ে বোঝা যায়। কুরআনের ১০৭ নম্বর এই সূরায় মানুষের প্রতি দয়ালু হওয়া, এতিমের অধিকার রক্ষা এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এখানে সূরার উচ্চারণ ও অর্থসহ বিস্তারিত দেওয়া হলো।

সূরা মাউন
শিরোনাম | উত্তর |
---|---|
সূরার নাম | সূরা মাউন |
সূরা কোথায় অবতীর্ণ | মেক্কায় |
সূরার নামের অর্থ | ছোট সাহায্যের সামান্য প্রদান |
কুরআনের কত নাম্বার সূরা | ১০৭ |
সূরার আয়াতের সংখ্যা | ৭ |
সূরায় কি রুকু আছে (থাকলে কয়টি) | ১টি |
কত নাম্বার পারার সূরা | ৩০তম পারা |
সূরার শব্দ সংখ্যা | ২৫ |
সূরার বর্ণ সংখ্যা | ১২৩ |
সূরা মাউন বাংলা উচ্চারণ - সূরা মাউন এর বাংলা অর্থ
আয়াত | আরবি | আরবি-বাংলা | বাংলা অর্থ |
---|---|---|---|
বিসমিল্লাহ | بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ | বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম | পরম করুণাময়, অতি দয়ালু আল্লাহর নামে। |
১ | أَرَأَيْتَ الَّذِي يُكَذِّبُ بِالدِّينِ | আরা'আইতাল্লাযী ইউকাজ্জিবু বিদ্দীন | আপনি কি তাকে দেখেছেন, যে বিচার দিবসকে অস্বীকার করে? |
২ | فَذَٰلِكَ الَّذِي يَدُعُّ الْيَتِيمَ | ফাযালিকাল্লাযী ইয়াদু্উল ইয়তীম | সে সেই ব্যক্তি, যে এতিমকে তাড়িয়ে দেয়। |
৩ | وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ الْمِسْكِينِ | ওয়ালা ইয়াহু্দ্ধু আলা তা'আমিল মিসকীন | এবং অভাবগ্রস্তের অন্নদানের জন্য উৎসাহিত করে না। |
৪ | فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ | ফাওয়াইলুল লিল মুসাল্লীন | অতএব দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা সালাত আদায় করে। |
৫ | الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ | আল্লাযীনা হুম আন সোলাতিহিম সাহূন | যারা তাদের সালাতে উদাসীন থাকে। |
৬ | الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ | আল্লাযীনা হুম ইউরা'উন | যারা লোক দেখানোর জন্য কাজ করে। |
৭ | وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ | ওয়া ইয়ামনাউনাল মা'উন | এবং যারা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দানে কার্পণ্য করে। |
সূরা মাউন এর ব্যাখ্যা ও আলোচনা
সূরা মাউন হলো কুরআনের ১০৭ নম্বর সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং মোট ৭টি আয়াত নিয়ে গঠিত। সূরাটি মানবতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ধর্মীয় দায়িত্ববোধের বিষয়ে শিক্ষা দেয়। এখানে মানুষের মধ্যে দয়া, সহানুভূতি এবং সমাজের দুর্বল শ্রেণির প্রতি দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। যারা নামাজ পড়ে কিন্তু মানুষের প্রতি সদয় নয়, এই সূরায় তাদের সতর্ক করা হয়েছে।
সূরা মাউন এর শিক্ষা
সূরা মাউন আমাদের শেখায়ঃ
- এতিমদের অবহেলা করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
- গরীব ও অসহায়দের সাহায্য করা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ দিক।
- নামাজের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের নৈতিক চরিত্র উন্নত করা, শুধুমাত্র বাহ্যিকভাবে পালন যথেষ্ট নয়।
- যারা ছোট ছোট দানের জিনিসেও কার্পণ্য করে, তাদের আচরণ ইসলামের বিপরীত।
সূরা মাউন বাংলা উচ্চারণ এবং সূরা মাউন এর বাংলা অর্থ ভালোভাবে অনুধাবন করলে এই শিক্ষাগুলো গভীরভাবে হৃদয়ে প্রোথিত হয়।
সূরা মাউন এর ফজিলত কি
সূরা মাউন পড়ার ফজিলতের মধ্যে রয়েছেঃ
- হৃদয়ে দয়া ও সহানুভূতির গুণ বৃদ্ধি পাওয়া।
- নামাজ ও দানের গুরুত্ব উপলব্ধি করা।
- মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য সচেতনতা গড়ে ওঠা।
নিয়মিত সূরা মাউন বাংলা উচ্চারণ এবং এর অর্থ পাঠ করলে অন্তর আরও কোমল হয় এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়।
সূরা মাউন এর তাফসীর
তাফসীরে ইবনে কাসীর এবং অন্যান্য বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ অনুযায়ী, সূরা মাউনে তিন ধরনের মানুষের সমালোচনা করা হয়েছেঃ
- যারা এতিমদের অধিকার দেয় না।
- যারা গরীবদের সাহায্য করতে উৎসাহ দেয় না।
- যারা রিয়া (লোক দেখানো) নামাজ পড়ে এবং সাধারণ সাহায্য থেকেও বিরত থাকে।
তাফসীর বোঝার জন্য সূরা মাউন বাংলা উচ্চারণ এবং সূরা মাউন এর বাংলা অর্থ জানার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এতে সূরার মর্মবাণী সহজেই অনুধাবন করা যায়।
সূরা মাউন এর শানে নুযুল
শানে নুযুল বা অবতীর্ণের কারণ হিসেবে জানা যায়, মক্কার একদল নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি যারা বাহ্যিকভাবে ধর্মীয় আচার পালন করত, কিন্তু বাস্তবে অসহায় ও গরীবদের প্রতি কোন সহানুভূতি দেখাত না, তাদের এই সূরার মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে। মূলত, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই ছিল এই সূরার মূল উদ্দেশ্য।
সূরা মাউন কবে এবং কোথায় অবতীর্ণ হয়?
সূরা মাউন মক্কার প্রাথমিক সময়ে অবতীর্ণ হয়েছে। সে সময় ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষা ছিল নৈতিক চরিত্র গঠন এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা। মক্কার সমাজের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে এই সূরার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হয়। সূরা মাউন বাংলা উচ্চারণ জানার মাধ্যমে আমরা সূরার এই বার্তাকে আরও স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারি।
সূরা মাউন ইসলামের মৌলিক নৈতিক শিক্ষা ও সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতীক। যারা সূরা মাউন বাংলা উচ্চারণ ও সূরা মাউন এর বাংলা অর্থ জানতে চান, তাদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা। মানবিকতা, দয়া এবং সহানুভূতির শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে এই সূরাকে হৃদয়ে ধারণ করা প্রয়োজন।
FAQ - সাধারন জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
সূরা মাউন এর আয়াত সংখ্যা কত?
সূরা মাউনে মোট ৭টি আয়াত আছে।
সূরা মাউন এর ফজিলত কি?
সূরা মাউনে সামাজিক দায়িত্ব ও মানবিক আচরণের গুরুত্ব শেখানো হয়েছে। এই সূরা নিয়মিত পাঠ করলে মানুষের প্রতি সদাচরণ, এতিমের হক আদায় এবং সমাজের দুর্বল শ্রেণির প্রতি সহানুভূতির গুণ অর্জন হয়। অনেক হাদিসে ছোট ছোট ভালো কাজের গুরুত্ব ব্যাখ্যার সময় এই সূরার মর্ম বোঝানো হয়েছে।
সূরা মাউন কত পারায় আছে?
সূরা মাউন ৩০তম পারায় অবস্থিত।
সূরা মাউন কত নাম্বার সূরা?
সূরা মাউন কুরআনের ১০৭ নম্বর সূরা।
সূরা মাউন কবে অবতীর্ণ হয়?
সূরা মাউন মক্কার প্রাথমিক সময়ে অবতীর্ণ হয়েছে। এটি মক্কী সূরাগুলোর মধ্যে একটি।
সূরা মাউন কোথায় অবতীর্ণ হয়?
সূরা মাউন মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল।
লেখক মন্তব্য
সূরা মাউন বাংলা উচ্চারণ এবং সূরা মাউন এর বাংলা অর্থ জানার মাধ্যমে আমরা এই ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সূরার গভীর শিক্ষা সহজে বুঝতে পারি। মানবিকতা, সহানুভূতি ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ তৈরিতে সূরা মাউনের শিক্ষা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
সূরা মাউন আমাদের সমাজের দুর্বল, এতিম ও অসহায় মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও সদাচরণ শেখায়। এই সূরা হৃদয়ে মানবিকতা জাগিয়ে তোলে এবং ইসলামের মৌলিক নীতিগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়। সমাজ গঠনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
আপনার মন্তব্যটি এখানে লিখুন
comment url