সূরা কদর - বাংলা অর্থসহ উচ্চারণ । ফজিলত । ব্যাখ্যা

লাইলাতুল কদর সূরা এবং সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ বিষয়ক এই নিবন্ধে কদর রাতের মাহাত্ম্য, সূরার ফজিলত ও শানে নুযুল বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ তুলে ধরা হয়েছে। সহজবোধ্য বাংলা উচ্চারণসহ পড়ুন এবং বোঝার মাধ্যমে ইবাদতের মান আরও বাড়ান।

লাইলাতুল কদর সূরা - সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ - লাইলাতুল কদর সূরা - সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ - লাইলাতুল কদর সূরা - সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ -লাইলাতুল কদর সূরা - সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ

লাইলাতুল কদর সূরা এবং সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ নিয়ে এই লেখাটি রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাত, লাইলাতুল কদরের তাৎপর্য ও ইসলামী জীবনে এর গভীর প্রভাব ব্যাখ্যা করে। সূরার প্রতিটি আয়াতের অর্থ, তাফসীর ও উচ্চারণ এখানে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে যাতে পাঠক সহজেই অনুধাবন করতে পারেন।

সূরা কদর

সূরার নামসূরা কদর
সূরা কোথায় অবতীর্ণমক্কায়
সূরার নামের অর্থমহিমাময় রজনী / মর্যাদার রাত
কুরআনের কত নাম্বার সুরা৯৭
সূরার আয়াতের সংখ্যা
সূরায় কি রুকু আছেনেই
কত নাম্বার পারার সূরা৩০তম পারা
সূরার শব্দ সংখ্যা৩০
সূরার বর্ণ সংখ্যা১১৪

লাইলাতুল কদর সূরা - সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ

আয়াত নম্বর আরবি আরবি-বাংলা উচ্চারণ বাংলা অর্থ
বিসমিল্লাহ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম শুরু করছি আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
আয়াত ১ إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ ইন্না আন্‌যালনাহু ফি লাইলাতিল-কদর নিশ্চয় আমি একে (কুরআনকে) নাজিল করেছি কদরের রাতে।
আয়াত ২ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ ওয়া মা আদ্‌রাকা মা লাইলাতুল-কদর আপনি কি জানেন কদরের রাত্রি কী?
আয়াত ৩ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ লাইলাতুল-কদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর কদরের রাত্রি এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
আয়াত ৪ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ তানাজ্জালুল মালায়িকাতু ওয়ার্-রূহু ফিহা বি-ইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর সেই রাতে ফেরেশতাগণ ও জিবরাঈল তাদের পালনকর্তার আদেশে প্রত্যেক বিষয়ে অবতীর্ণ হন।
আয়াত ৫ سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْرِ সালামুন হিয়া হাত্তা মতলা‘ইল ফাজর তা (রজনীটি) শান্তি, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

সূরা কদর এর ব্যাখ্যা ও আলোচনা

সূরা কদর হলো পবিত্র কুরআনের ৯৭ নম্বর সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এতে মাত্র ৫টি আয়াত রয়েছে। এই সূরায় বলা হয়েছে যে, লাইলাতুল কদর সূরা সেই মহান রাতের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে – যে রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে। এ রাতের মর্যাদা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। ফেরেশতাগণ ও রুহ (জিবরাঈল আঃ) আল্লাহর হুকুমে এই রাতে অবতীর্ণ হন এবং ফজর পর্যন্ত শান্তি বিরাজ করে।

এই সূরাটি খুব ছোট হলেও, তা ইসলামের এক গভীর অধ্যায়কে তুলে ধরে—আল্লাহর করুণা, তাঁর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া হিদায়াত এবং মানবজাতির জন্য এক বিশাল দয়া।

সূরা কদর এর শিক্ষা

সূরা কদর আমাদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয় - 

  • আল-কুরআনের গুরুত্বঃ কুরআন এমন এক রাতে অবতীর্ণ হয়েছে, যা এক হাজার মাসের থেকেও উত্তম – এর মানে, কুরআনের মর্যাদা কত বিশাল।
  • লাইলাতুল কদরের মাহাত্ম্যঃ এই রাত আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও গুনাহ মাফের এক সুবর্ণ সুযোগ।
  • ইবাদতের অনুপ্রেরণাঃ এই রাতে ইবাদত করলে, তা ৮৩ বছরের বেশি সময় ইবাদতের সমতুল্য হয়।
  • নিয়মিত ইবাদত ও তাকওয়াঃ এই রাত আমাদের শিক্ষা দেয়, প্রতিটি রাতই হতে পারে পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণ।

সূরা কদর এর ফজিলত কি

সূরা কদর পড়ার এবং বোঝার মাধ্যমে যে ফজিলত পাওয়া যায়, তা শুধু দুনিয়াতেই নয়, আখিরাতেও উপকারী -

  • পাঠ করলে এক হাজার মাসের ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যায়।
  • যারা লাইলাতুল কদর সূরা নিয়মিত পড়ে, তাদের উপর আল্লাহর রহমত নাজিল হয়।
  • এটি শয়তানের কুপ্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং মনকে প্রশান্ত রাখে।
রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানসহকারে ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারী, মুসলিম)

সূরা কদর এর তাফসীর

সূরা কদর এর তাফসীর নিচে উল্লেখ করা হলো –
আয়াত ১
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাযিল করেছি কদরের রাতে।”
এখানে কুরআনের আল্লাহর পক্ষ থেকে ধাপে ধাপে নাযিল হওয়ার সূচনা বর্ণিত।

আয়াত ২
وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ
অর্থ: “তুমি কী জানো, কী সেই কদরের রাত?”
এই প্রশ্নের মাধ্যমে কদর রাতের গুরুত্ব ফুটে ওঠে।

আয়াত ৩
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
অর্থ: “এই কদরের রাত এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”

আয়াত ৪
تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا...
অর্থ: “এই রাতে ফেরেশতারা এবং রুহ (জিবরাঈল) অবতীর্ণ হন তাদের প্রতিপালকের আদেশে।”

আয়াত ৫
سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْرِ
অর্থ: “ফজর পর্যন্ত এই রাত শান্তিতে পরিপূর্ণ।”
এতে বোঝা যায়, এ রাত শান্তি ও নিরাপত্তার রাত।

সূরা কদর এর শানে নুযুল

শানে নুযুল বা সূরাটি কোন প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়েছে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা.) এক সাহাবীর আমলের কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন, কারণ পূর্ববর্তী উম্মতের কারও আমল ছিল অনেক দীর্ঘ সময়জুড়ে। তখন আল্লাহ লাইলাতুল কদর দান করেন, যাতে উম্মতে মুহাম্মদের কম সময়ের ইবাদতেও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।

সূরা কদর কবে এবং কোথায় অবতীর্ণ হয়?

সূরা কদর মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে, কুরআনের শুরুর দিকেই। এটি লাইলাতুল কদর বা কদরের রাতে নাযিল হয়, যা রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর একটি – বিশেষ করে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ তারিখে হতে পারে। ইসলামী ইতিহাস মতে, রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত অনুসন্ধান করো।”

FAQ - সাধারন জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

সূরা কদর এর আয়াত সংখ্যা কত?

৫টি আয়াত।

সূরা কদর এর ফজিলত কি?

এটি এক হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম; পড়লে বিপুল সওয়াব অর্জিত হয়।

সূরা কদর কত পারায় আছে?

এটি কুরআনের ৩০তম পারায় অবস্থিত।

সূরা কদর কত নাম্বার সূরা?

এটি কুরআনের ৯৭ নম্বর সূরা।

সূরা কদর কবে অবতীর্ণ হয়?

রমজান মাসের শেষ দশকের একটি বেজোড় রাতে।

সূরা কদর কোথায় অবতীর্ণ হয়?

এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।

লেখক মন্তব্য

লাইলাতুল কদর সূরা এবং সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ বিষয়টি শুধু একটি ধর্মীয় আলোচনাই নয়, বরং এটি আমাদের আত্মিক উন্নয়নের একটি উপায়। এ সূরা প্রতিটি মুসলমানকে আল্লাহর রহমত অর্জনের পথ দেখায় এবং জীবনে শান্তি ও বরকত আনতে অনুপ্রাণিত করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার মন্তব্যটি এখানে লিখুন

comment url